দিশারী মুখোপাধ্যায়




দিশারী মুখোপাধ্যায়ের কবিতা


একা এবং নিঃস্ব মানুষ  ২১- ৩০

২১)

জীবনে এমন একটা সময় যায় 
যখন সমস্ত ভাল ভাল বিশেষণগুলো 
তুমি সর্বনামটির সঙ্গে লেগে থাকে 

তারপর পৃথিবীর অভ্যন্তরস্থ প্লেটগুলো 
জায়গা বদল করলেই 
আমি শব্দটির দাপট বেড়ে যায় 

অন্ধকার প্রসব করার জন্য জরায়ুর দরকার হয়না 
আমি =আলো =অন্ধকার 


২২)

যতিচিহ্নগুলো আমি ঠিকঠাক ব্যবহার করতে শিখিনি 

টেলিস্কোপের সঙ্গে আমার মাঝেমধ্যেই 
চিরস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি হয় 
যখন টেকে না তখন টেথিস্কোপের শরণাপন্ন হই 

একটা হাইফেন বাড়তে বাড়তে এত বড় হয়ে যায় 
অথবা কয়েকটা অর্বাচীন ডট 
তারা মানতেই চায় না 
ডুবসাঁতার বলে একটা প্রথা এখনো চালু রেখেছে 
গভীর জলের মাছেরা 


২৩)

স্বাভাবিক ভাবেই ভেবেছিলাম 
মঞ্চ জুড়ে থাকবে কেবল একটিই আসন 
আপনার সৌজন্যে রাজ শব্দটি যার বিশেষণ 
বাকিরা তো অন্তেবাসী 
প্রান্তে থাকবে কৌতূহল নিয়ে 
পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে 
উঁকিঝুঁকিতে ধন্য হবে 

মঞ্চ বলে কিছুই আর থাকবে না 
দুঃস্বপ্নেরও সাহস ছিল না এতটা ভাবার 


২৪)

জল ছল করে 
ছলছলও করে কোনো চোখে 

চোখের জলেই যারা ভিজে যায় 
কাদা হয়ে যায় 
সেইসব মাটির বুকে 
পদচিহ্ন রাখা খু্ব সহজ বিষয় 

সারাজীবন প্রবঞ্চনার কৌশলে ধার দিতে দিতে 
প্রবঞ্চক পদবির ধারক হয়েছি 


২৫)

তুমি কি রাত্রির কাছে হাঁটুমুড়ে প্রার্থনা করেছ কোনোদিন 
কোনোদিন কি বুক থেকে হৃদপিন্ড বার করে 
জলে ধুয়ে পরিস্কার করেছ 

দূষণ ভূষণ করে 
চেরা জিভ অর্জন করেছ 
এখন বিবর ছাড়া নিরাপদ আশ্রয় নেই 

অন্ধকার ক্রমশই স্থাবরতা বাড়িয়ে চলেছে 


২৬)

ডুবে যাবার সময় মনে হচ্ছিল 
ভেসে উঠছি 
যত জল গিলছি 
তত হাল্কা হচ্ছি 

তারপর সূর্য একবার চিকচিক করে উঠতেই 
লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ল 
আনন্দের শোকবার্তা 

আমাকে তুলে এনে মাটিতে শোয়ালে তোমরা 
আর ডাক পড়ল অগ্নিকর্তার 


২৭)

অন্ধকার না থাকলে 
এত পরিস্কার করে দেখা যেত না 

চতুর্দিকে রাত্রি যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে 
ঘুমন্ত মানুষগুলোর উঠোনে উঠোনে 
তখনই আমার চোখে 
আলো খুঁজে পেল তার নিজের বিভা 

খু্ব নিঃশব্দে পা টিপে টিপে 
সময় অতিক্রম করল আমাদের অর্জিত দেওয়াল 
তার কাঁধেই 
নতুন রাস্তা তৈরির দায়িত্ব 


২৮)

বর্ষা কেটে যাবার পর 
অসমাপ্ত চিঠি ফের শুরু হয় 

প্রসঙ্গ যেখানে গিয়েছিল 
কাঁচা পাকা রাস্তা ধরে ইন্ডিয়াগেট 
সেইখানে বিরতি হয়েছিল 
আজ আবার বাজানো হবে রেফারির বাঁশি 

প্রসঙ্গ শব্দটি তোমাকে 
দীর্ঘমান করে তুলবে   আর 
বর্ষার জন্য নতুন মসলিন কিনব 
আগামী বছরে সব বারবার 


২৯)

দুদিক দিয়ে কথা বলছে দুরকম ভাষায় 
একটাই পেন্সিল 
একই সময়ে 

সময় পাল্টালে ফের 
ভাষারাও পাল্টে যায় 
অপরিবর্তিত থাকে শুধু পেন্সিল 

সেইসব ভাষাদের বর্ণ আলাদা 
বাক্য গঠনের ভিয়েনও সব আলাদা আলাদা 
সেইসব ভাষাদের বুক , হৃদপিন্ড , শিরা ও ধমনী 
সব আলাদা আলাদা 

পেন্সিলটি এক আর পেন্সিলের খিদে 


৩০)

প্রত্যেকটি স্বপ্নই নিজেকে দেখার আগে ভাবে 
সে যেন স্বপ্নের মত হয় 
এরকমই চলছিল এতদিন 

হাতুড়ি শাবল গাঁইতি হেঁসো 
এরাও কিছু আলাদা উপায়ে স্বপ্ন দেখে 
কুমোরের চাকা সেকথা জানে 

আজ দুনিয়ার সব স্বপ্ন 
এক জায়গায় জড়ো হয়েছে 
নিজেকে দেখার জন্য তারা আজ 
ব্যক্তিগত চোখের দাবিতে সরব হয়েছে 

1 টি মন্তব্য: