হিয়া মুখার্জী





হিয়া মুখার্জীর কবিতা 



ব্লোজব ইন আ মুভি থিয়েটার


এই যে একের পর এক ফ্রেম সপাটে আপনার রেটিনায় গাঢ় ভাবে প্রোথিত হয়ে যাচ্ছে আর আপনিও অমরত্বের টসটসে লোভে দৃষ্টি ফেরাতে পারছেন না স্নায়ু ভারী হয়ে আসছে জিভ ভারী হয়ে আসছে আপনি সদ্য বালকের বিষ্ময় নিয়ে পর্দার ভিতরে ঢুকে পড়তে চাইছেন য্যানো ওখানেই জন্নত ওখানেই নির্বাণ ওখানেই মোক্ষ অথচ আদৌ খেয়াল করছেন না আমার ফিসনেট স্টকিং এ সাইলোসাইবিনের জ্বলজ্বলে আঁচ কীভাবে একের পর এক কলামগুলিকে পরাবাস্তব এক মায়ায় আচ্ছাদিত করে রাখছে লক্ষ্য করছেন না পপকর্ন বাকেটের প্রাকৃত অন্তরালে আমি আপনাকে পুর্নজন্ম প্রস্তাব করছি দীঘল শস্য প্রস্তাব করছি উন্মোচনের পর উন্মোচন পেড়িয়ে এক গাঢ় বাদামী ধোঁওয়া প্রস্তাব করছি অথচ ক্রমিক এক অহংবোধ আপনাকে ভারসাম্য রক্ষা করতে বাধ্য করছে আপনি পর্দা ও পর্দা উত্তর সভ্যতায় এমনভাবে মগ্ন হয়ে আছেন য্যানো ঔদাসীন্যই আপনার এক ও একমাত্র বর্ম আর আপনার দুই উরুর ফাঁকে আমি নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সঁপে দিচ্ছি য্যানো বন্দর হারিয়ে ফ্যালা ধীবর স্টিমার আপনার পায়ের পাতার থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না ক্রুশবিদ্ধ যিশু মনে হচ্ছে আপনাকে মনে হচ্ছে ছটফট করছেন যন্ত্রণায় য্যানো আমি ও একমাত্র আমিই আপনার ব্যাথার উপশম চিনি আপনার জন্মতিল ও শৈশবের ক্ষত চিনি আর আপনি স্থিতপ্রজ্ঞ হয়ে কোন অলীক ন্যারেটিভে ডুবে আছেন পর্দা হা হা দুলে উঠছে পর্দায় গেলাস ভারী হয়ে উঠছে পানপাত্র উছলে উঠছে পর্দায়  উদাসীন রতিক্রিয়ারত নায়ক ও নায়িকা ফ্লাড রিলিফের জন্য অপেক্ষা করছে আঃ মঁসিয়ে আপনি কবে রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে ফিরে আসবেন এই অন্ধকার থিয়েটারে ঘিনঘিনে ফউক্স লেদারের সাম্রাজ্যে শেষনাগ জ্বলে উঠছে আমার আলজিভ জ্বলে উঠছে আপনার অনস্তিত্ব আমি সহ্য করতে পারছি না আপনার ভ্রুক্ষেপহীন বিবাহবাসর আমি সহ্য করতে পারছি না আপনি আত্মহত্যার মত সুচারু আয়োজন থেকে চোখ ফেরান পর্দার অশীতিপর ব্যর্থতা থেকে চোখ ফেরান  আর আপনার দুই উরুর মাঝে আমার প্রিয় স্বদেশকে খুঁজে নিতে দিন কেন্দ্রাতিগ বলে উপড়ে আনতে দিন আপনার অযৌন অনীহা অন্তত একবার লকগেট উন্মুক্ত হতে দিন কেননা পর্দায় কোনো জীবন্ত আখ্যান নেই মঁসিয়ে শুধুই রঙ ও রসের এক হাস্যকর বিন্যাস শুধুই প্রতীক ও একধরণের ঘ্যানঘ্যানে চ্যুতি এমনকী আপনার প্রিয় বড় প্রিয় সেই অমরত্বও নেই এইসব ব্যর্থ যোগাযোগ থেকে চোখ ফেরান মঁসিয়ে কেননা এখনো সময় আছে যতক্ষণ না এন্ড ক্রেডিট যতক্ষণ না লোহিতকণিকার মত গাঢ়ভাবে নিষ্ক্রমণের চিহ্ন জ্বলে উঠছে যতক্ষণ না শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই প্রেক্ষাগৃহের গর্ভে স্বয়ং ঈশ্বর নেমে আসছেন ততক্ষণ বিশ্বাস করুন এই আমরা আমরাই সিনেমা



একটি স্বাভাবিক ঘটনা 



বিশ্বাস রাখো তুমি কেউ নও তুমি কিচ্ছুটি নও যতক্ষণ না নেশাগ্রস্ততায় কেউ তোমায় ভালোবাসছে যতক্ষণ না মুখে ব্রণ আর কনুই এ অসংখ্য সিরিঞ্জের ভালোবাসার চিহ্ন নিয়ে কেউ তোমার কাছে আসছে যতক্ষণ না আচমকা ধাক্কা দিয়ে কেউ তোমায় এই স্যাঁতস্যাঁতে কবিতা থেকে ছুঁড়ে ফেলছে বাস্তবের কঠিন মাটিতে আর ঊর্ধ্বের মেঘপুঞ্জ থেকে তোমার মাথায় এসে পড়ছে গুচ্ছ গুচ্ছ ড্রালা আর তখন মেয়ে তুমি ভুলেও ভাবতে যেও না এই অসহ্য ভায়োলীন বোধ যা তোমায় আচ্ছন্ন করছে এই নেশাখোর বিকেল যা তোমায় কদর্য আস্কারা দিচ্ছে এ তোমার মজ্জাগত না নিছক সামাজিক নির্মাণ মাত্র ভুলেও ভাবতে যেও না তোমার জন্য আদৌ কোনো ব্যক্তিগত আর্কেডিয়া রাখা ছিল পৃথিবীর কোনো প্রান্তে বরং বিশ্বাস রাখো করুণাময় ঈশ্বর ও সর্বশক্তিমান রাষ্ট্রে বিশ্বাস রাখো জনসভায় পেশ করা হাস্যমুখ  প্রধানমন্ত্রীর স্তোকবাক্যে আর মনে রাখো মুখে ব্রণ আর কনুইয়ে অসংখ্য সিরিঞ্জের ভালোবাসার চিহ্ন নিয়ে যে আসছে সে প্রশ্নাতীত আর আগামীকালের মত আবশ্যিক সে আদৌ তোমার ব্যক্তিগত যুদ্ধের খোঁজ চায় না আদৌ পরিচিত হতে চায় না তোমার রক্তের স্রোতের ভিতর অবিরত বয়ে চলে প্রেতেদের সাথে এবং তা কোনো অবস্থাতেই বাধ্যতামূলক নয় বরং আশ্বস্ত হও মেথাডনের চেয়ে সে তোমাকে বেশী ভালোবাসে সমীক্ষায় দ্যাখা গ্যাছে দেশের সিংহভাগ মানুষ দেবদূতের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে তুমিও বিশ্বাস করে নাও ভালোবাসা এরকমই বিমূর্ত ও বিবমিষাময় ভেবে নাও পাব্লিক ইউরিনালে তোমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে মুখে ব্রণের দাগ আর কনুইএ অসংখ্য সিরিঞ্জের ভালোবাসার চিহ্ন নিয়ে সেই অলৌকিক যুবা যখন কিংখাবের মত জিপার থেকে উন্মুক্ত করবে নিজের লিঙ্গ আর তোমার মতামতের তোয়াক্কা না করেই তোমার যোনিতে ইলেকট্রিক ভোল্টের মত নামিয়ে আনবে একের পর এক ঠাপ তখন বিশ্বাস রাখো এই সেই ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত অসম্ভব ভালোবাসা এই সেই প্রবাদপ্রতিম জন্নত ও মোক্ষ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এইরূপই স্তোক দিয়েছেন তখন সম্মতি অসম্মতির মত তুচ্ছ বাতুলতাগুলোকে ছুঁড়ে ফেলাই  বাঞ্ছনীয় মনে রেখো দেশের সিংহভাগ মানুষ উপাচার ও উপভোগে বিশ্বাস রাখেন মনে রেখো এতক্ষণ তুমি কেউ ছিলে না কিচ্ছুটি ছিলে না যতক্ষণ না এই মাহেন্দ্রক্ষণে তোমাকে কেউ পরিপূর্ণ সাংবিধানিক মর্যাদায় ভালোবাসছে যতক্ষণ না সমবেত করতালির সঙ্গতে তোমাকে আদ্যন্ত পিষে ফেলছে কেউ আর কিচ্ছুতে কিছু যায় আসে না আর কিচ্ছুতে কোনো অপূর্ণতা নেই মনে রেখো মেয়ে আজ অবিশ্রান্ত উৎসবের দিন আজ অবিশ্রান্ত আনন্দে রক্তাক্ত হওয়ার দিন অতএব নিপাত যাক তোমার রক্তের ভিতর অবিরত বয়ে চলা সেইসব প্রেতেদের উত্তেজক প্ররোচনা নিপাত যাক দূরপাল্লার সেই ট্রেন যা তোমাকে তোমার ব্যক্তিগত আর্কেডিয়া অব্ধি নিয়ে যাওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আর গাঁড় মারাক বিভ্রান্তিকর ও স্যাঁতস্যাঁতে সেইসব কবিতা যা তোমায় অন্যথা ভাবতে বাধ্য করছে 




পেনি ড্রেডফুল 


তুমি এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারো অ্যালাইদা একদিন এভাবেই সঙ্গমরত অবস্থায় আমাদের চামড়াগুলো যথাযথ ফ্যাকাসে হয়ে উঠবে রক্তাল্পতায় ভুগতে ভুগতে আমরাও একদিন যথাযথ সাদা হয়ে উঠবো ধবধবে পোর্সিলিনের মত মেলানিনরহিত একটা ত্বকের জন্য ভেবে দ্যাখো অ্যালাইদা কত কত বিনিদ্র রাত আর অশান্ত দুপুর আমরা কাটিয়ে এসেছি ভেবে দ্যাখো ভিভিআইপি লাউঞ্জে যথার্থ এশীয় একটি কটিবন্ধ থেকে কোকেইন টেনে নেওয়ার আজগুবি স্পৃহা আমাদের কতদূর টেনে নিয়ে এসেছে এই পিচ্ছিল গুহাপথে আর বেশীদূর নয় আর সামান্য রাস্তা শীতে ও শীৎকারে অতিক্রম করতে পারলেই সেই অনন্ত হ্যাম আর বেকনের সুললিত আয়োজন সেই ধোঁওয়া ওঠা মাংসের সুরুয়া আর ঐশী ব্ল্যঁ দ্যে ব্ল্যঁ-র নিগূঢ় ব্যবস্থাপনা আর আমাদের চামড়াগুলো ক্রমে ভেপার ল্যাম্পের ঔজ্জ্বল্যে ঝলমল করে উঠবে স্বর্গ থেকে আমাদের মাথায় ঝরে পড়বে পুরাকল্পীয় সেই ককেশীয় সৌজন্যবোধ আর একে অন্যের ভিতরে প্রবেশ পেতে পেতে আমরাও সার্থক ভাবে সফেন সার্থক ভাবে সুন্দর হয়ে উঠবো অতিলৌকিক অ্যানোরেক্সিয়া আমাদের অস্থিগুলোকে মোহময় করে তুলবে আমাদের পাঁজরের খাঁজে খাঁজে আজব প্রতিসাম্যে এঁটে বসবে গ্লো সাইন শিল্প ও সত্যের জ্বলন্ত বিজ্ঞাপন হয়ে আমরা হেঁটে যাবো মাইলের পর মাইল পথে ইশারারত নর্তকীরা আমাদের ঠোঁট থেকে পারদ চেটে নেবে প্লাস্টিকের মত অনন্য ও অনিবার্য হয়ে উঠবে আমাদের এই অলীক যাতায়াত ভেবে দ্যাখো অ্যালাইদা আমরা বরাবর চেয়ে এসেছি আমাদের সম্ভাব্য সন্তানেরা অসুখে ও লিঙ্গে বড় হয়ে উঠুক আমরা বরাবর চেয়ে এসেছি নিজের সন্তানের প্রতি যৌনতা অনুভব করে অজর ও অমর হয়ে উঠতে অথচ ত্রিকালস্পর্শী এক অসহায়তা আমাদের স্নায়ুগুলোকে শিথিল করে রেখেছে এযাবৎকাল আমাদের মেচেতার ছোপওলা মুখাবয়ব আমাদের বাদামী মাতৃভাষা আর কালশীটেময় পিতৃপরিচয় আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে এযাবৎকাল শুধু প্রয়োজন ছিল ধর্মগ্রন্থগুলোর যথাযথ পুর্নপাঠ চকচকে ম্যাগাজিন আর নিউজ বুলেটিনগুলোর পুর্নবিবেচনা শুধু প্রয়োজন ছিল মাথাভিড় এই উপত্যকায় একজন সার্থক প্রফেট খুঁজে নেওয়া এসো অ্যালাইদা এই সস্তা মদ আর পেনি ড্রেডফুলের নিঘিন্নে পৃথিবী ছেড়ে বেহেশতের দিকে হামাগুঁড়ি দেওয়ার চেষ্টা করি সর্বশক্তিমান ডলারের দেবতা গতকাল স্বপ্নে আমায় আস্বস্ত করেছেন শুধুমাত্র রঙের মাত্রার সামান্য হেরফের একটা তাজ্জবকর লটারীর টিকিট হয়ে উঠতে পারে শুধু প্রয়োজন কষে কর্ষণ আর যথাযথ অধ্যাবসায় অতএব সঙ্গমরত অবস্থায় আমরা উপড়ে আনার চেষ্টা করি যাবতীয় ঘিনঘিনে ছাল ও বাকল স্বদেশ স্বজন ও আরো যা যা কিছু মানসিক প্রতিবন্ধকতা ভেবোনা আর সামান্য যামিনী অতিক্রান্ত হলেই সাইরেনের মত বেজে উঠবে ধবধবে টেলিফোন সেট আর সিংহদরজার ওপরপ্রান্ত থেকে তুরূপের মত ভেসে আসবে শাশ্বত প্রিভিলেজ দেবতা এইরূপই আস্বস্ত করেছেন ওগো অ্যালাইদা হাঁফিয়ে পোড়ো না সোনা বিশ্বাস রাখো পাম ওয়াইন আর স্যান ফ্যার্নান্দো ভ্যালির শরীরী উৎযাপনে বিশ্বাস রাখো বেইল আউট আর আর মহামতি ওয়াল স্ট্রীটে বিশ্বাস রাখো শতাব্দীপ্রাচীন খিদে একদিন আমাদেরো অপরূপ করে তুলবে আর এসো এসো এসো সূর্যোদয়ের আগে হিংসেয় পুড়তে থাকা প্রতিবেশীদের ঘুম ভাঙার আগে এই বিষে নীল হয়ে যাওয়া ঠোঁটে পুর্নবার চুমু খাও 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন